নাম | রানী রাসমণির |
জন্ম | 7ই মে 1861, জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি, কোলকাতা, ব্রিটিশ ভারত |
অভিভাবক | পিতা: হরেকৃষ্ণ দাস রামপ্রিয়া দাসী মা: রামপ্রিয়া দাসী |
স্বামী |
বাবু রাজচন্দ্র দাস |
সন্তান | পদ্মামনি,কুমারি,করুণা এবং জগদম্বা |
উল্লেখযোগ্য কাজ | দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দির |
মৃত্যু | 1861 সালের 19 শে ফেব্রুয়ারী |
খুব কম মহিলা বাংলার ইতিহাসে জায়গা পেয়েছেন, “রানী রাসমণি” তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি ছিলেন উদার চিন্তাধারার মহিলা এবং সমসাময়িক সমাজ সংস্কার আন্দোলনের প্রতি সহানুভূতিশীল ।
এটি ছিল সবচেয়ে খারাপ সময়। ভারতবর্ষের হিন্দু সমাজ তখন গোঁড়া ধর্মীয় মতবাদ, বর্ণ, কুসংস্কার এবং কুপ্রথা দ্বারা জর্জরিত পড়েছিল।
পুরুষ অধ্যুষিত সমাজের মধ্যে কলকাতার জানবাজারের রানী রাশমোনি উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে শক্তির স্তম্ভ ছিলেন।
রানী রাসমণির জীবনকাহিনী
রানী রাসমণির জন্ম হয় 28 সেপ্টেম্বর 1793 সালে, বর্তমান উত্তর ২৪ পরগণার হালিশহরে অবস্থিত কোণা নামক একটা ছোট্ট গ্রামে | তাঁর বাবার নাম ছিলো হরেকৃষ্ণ দাস আর মায়ের নাম ছিলো রামপ্রিয়া দাসী |
কৈশোরে প্রবেশের আগেই রানী রাসমনির বিয়ে হয়ে যায় কলকাতার এক ধনী ব্যবসায়ী জমিদার পরিবারের বাবু রাজচন্দ্র দাস এর সাথে।
শোনা যায়, বাবু রাজচন্দ্র দাস নাকি ব্যবসায়িক কাজের সুত্রে একদিন ত্রিবেণীতে যাচ্ছিলেন, যেতে যেতে তিনি হঠাৎই পাশের গঙ্গার ঘাটে এক ১১ বছর বয়সই মেয়েকে দেখতে পান, যে সেখানে স্নান করতে এসেছিলো |
তাঁর রূপ ও মুখের লাবন্য দেখে সদ্য যৌবন প্রাপ্ত যুবক রাজচন্দ্র তাঁর প্রেমে পরে যান | সেইদিন রাজচন্দ্র আর ত্রিবেণীর উদ্দেশ্যে যেতে পারেননি এবং পুণরায় বাড়ি ফিরে আসেন |
এরপরেও তিনি আরো বেশ কিছুবার হালিশহরে, রাসমণির গ্রামে এসেছিলেন | সেখানে তিনি রাসমণির রূপ ও লাবন্য ছাড়াও তেজস্বীনী এবং দুয়ালু রূপের সাথেও পরিচিত হন | যারফলে তিনি রানীকে আরো গভীরভাবে ভালোবেসে ফেলেন |
অবশেষে রাজচন্দ্র দাস, তাঁর বাড়ির অনেক গুরুজনদের অমত থাকার পরেও রানীকে বিয়ে করে
রাজচন্দ্রের ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের একজন ছিলেন প্রখ্যাত সমাজ সংস্কারক রাজা রাম মোহন রায়। রাম মোহন তাদের প্রথম সাক্ষাতের পরে তার মমতাময়ী প্রকৃতি তে মুগ্ধ হয়েছিলেন। জানা যায় যে তিনি রাসমণির কে এই বলে আশীর্বাদ করেছিলেন যে ” আপনি শত শত অসহায় নারীর জীবন থেকে অন্ধকার দূর করুন … আপনি নিজের নাম দ্বারা বেঁচে থাকুন এবং জনসাধারণের রানী হয়ে উঠুন ।”
রাজচন্দ্র ছিলেন শিক্ষিত এবং উন্নত চিন্তাধারার মানুষ, তাই তিনি রানী রাসমণি কে উপদেশ দেন তিনি যেন সেটাই করেন যা তার মন চায়।
রানী রাসমণি ও রাজচন্দ্র দুজনেই ভীষন দুয়ালু প্রকৃতির মানুষ ছিলেন | গরিব, দুঃখী, ভিক্ষুক কিংবা ক্ষুধার্ত মানুষ প্রত্যেকেরই রানী রাসমণি ও রাজচন্দ্র সেবা করে যেতেন মন প্রাণ উজার করে | কেউই অবহেলিত হতনা তাদের দয়া ও ভালোবাসা থেকে |
রাসমণি ও তাঁর স্বামী পরিবারের বেশিরভাগ সম্পদ সামাজিক কর্মকান্ড, ধর্মীয় ও দাতব্য প্রতিষ্ঠানে ব্যয় করে দিতেন | এতে অবশ্য তাদের পরিবারের অনেকেই বিভিন্নভাবে অমত প্রকাশ করতেন কিন্তু তাতে তাঁরা দুজনে কোনোদিনই মানুষের সেবা বন্ধ করেননি |
যদি আজ আমরা ভালোভাবে বিচার করে দেখি, তাহলে আমরা এটা নিশ্চই বুঝে যাবো যে, রাসমণির এই বিশাল জনহিতকর কর্মকান্ডের পিছনে তাঁর স্বামী রাজচন্দ্রের অবদান ছিলো প্রচুর |
রাজচন্দ্র তাঁর স্ত্রীকে কোনদিনও জনহিতকর কাজ করার ক্ষেত্রে কোনোভাবেই বাঁধা দেননি | সর্বদাই তাঁকে উৎসাহ দেওয়ার পাশাপাশি, পাশেও থেকেছেন একজন বন্ধুর মতো |

রাজচন্দ্র দাস ও রানী রাসমণির মোট ৫টা সন্তান হয়, যার মধ্যে তাদের প্রথম সন্তান জন্মের কিছু সময় পরেই মারা যায় | সে ছিলো তাদের প্রথম পুত্র সন্তান | তাদের বাকি ৪টে সন্তানই ছিলো মেয়ে |
যাদের নাম যথাক্রমে-
- পদ্মামনি
- কুমারি
- করুণা
- জগদম্বা রাখা হয় |
দুর্ভাগ্যক্রমে রাজ চন্দ্র হাজার 1830 সালে মারা যান এবং রানী রাসমণি অল্প বয়সে বিধবা হয়ে যান। স্বামীর মৃত্যুর পর ব্যবসার সমস্ত বোঝা এবং জমিদারি পরিচালনার দায়িত্ব তার ওপর এসে পড়ে ।
তিনি সেগুলো খুব দক্ষতার সাথেই পরিচালনা করেছিলেন। তিনি যে শুধু দক্ষতার সাথে ব্যবসা পরিচালনা করেছিলেন তাই নয়, সে গুলোকে অনেক বাড়িয়ে তুলেছিলেন।
শোনা যায় রাজচন্দ্রের এক বন্ধু যিনি মোটা অঙ্কের ঋণ হিসাবে নিয়েছিলেন, কিন্তু অর্থ পরিশোধ করেননি, রাজচন্দ্রের মৃত্যুর পর রাশমণির কাছে গিয়েছিলেন, এবং তাকে অনুরোধ করেছিলেন যে তিনি তাকে তার সম্পত্তির পরিচালক হিসাবে নিযুক্ত করুন। কূটনৈতিক পদক্ষেপে রানি রাশমোণী তাকে প্রথমে টাকা ফেরত দিতে বলে। পরিশোধ করার পরে, তিনি ওই ব্যক্তির কাছে ক্ষমা চেয়ে বলেন যে তার জামাই এস্টেটগুলি পরিচালনা করতে চায় এবং তিনি তার জামাইকে না করতে পারেন না। রানী রাসমনির এই কৌশলের ফলে অর্থটিও উদ্ধার করা হয়েছিল এবং ভদ্রলোক ক্ষুব্ধ হননি।
সারাজীবন রানী রাশমোনি দক্ষতার সাথে তার ব্যবসায়িক ব্যবসায়ের পরিচালনা করেছিলেন। তাঁর তৃতীয় মেয়ের সাথে বিবাহ হয় এক শিক্ষিত, রুচিপূর্ণ ভদ্রলোক মথুরা নাথ বিশ্বাসের সাথে। আজীবন, মাথুর বাবু (তাঁর ডাক নাম) তার ডান হাতের মানুষ এবং প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন। শুধু তাই না রানী তাকে নিজের পুত্রের মত স্নেহ করতেন।
তার জন্ম দরিদ্র পরিবারের হওয়ায় গরিবদের প্রতি তিনি সবসময় সহানুভূতিশীল ছিলেন, যার কারণে তিনি গরিবদের প্রচুর অর্থ সাহায্যও করতে।
রানীর দানমূলক, ধর্মীয় ও পবিত্র কাজকর্মের কোনও সীমা ছিল না। তিনি তার সময়ে বহু জনমুখী কাজ করেছেন, যেমন সুবর্ণরেখা নদী থেকে পুরী পর্যন্ত পুণ্যার্থীদের জন্য রাস্তা তৈরি বাবুঘাট, আহিরিতলা ঘাট, নিমতলা ঘাট এর মত স্নানঘাট তৈরি করা, তিনি বেলেঘাটা ক্যানেল এবং মধুমতি কানেক্টিং ক্যানেল তৈরি করার জন্য জমি দান করেছিলেন।
ইম্পেরিয়াল লাইব্রেরি(বর্তমানে জাতীয় গ্রন্থাগার), হিন্দু কলেজ (এখন প্রেসিডেন্সি কলেজ), বেঙ্গল ফিমিন রিলিফ তহবিল এবং অন্যান্য অনেক জানা এবং অজানা দাতব্য প্রতিষ্ঠান এর ক্ষেত্রে তার অবদান অপরিহার্য।
এরূপ উদারতার উদাহরণ যে কোনও দেশের ইতিহাসে অতুলনীয়। তিনি বিদ্যাসাগরের বিধবা পুনর্বিবাহ আন্দোলনের অর্থায়নের যথেষ্ট সহায়তা এবং পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন।
তার সাহস, দূরদৃষ্টি, দেশের প্রতি ভালবাসার এমন আরও অনেক উদাহরণ রয়েছে।
সেই দিনগুলিতে, দেশের অভিজাত এবং সাধারন জনগণ ভারতীয় ধর্ম, সংস্কৃতি ইতিহাসের প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলছিল, রাশমোনি প্রতিরোধ এবং পুনরুজ্জীবন করার চেস্ট সুরু করেন।
ঠিক তখন থেকেই রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ দের মত মহান বেক্তিত্ত দের হাত ধরে শুরু হয়েছিল সেই মহান ভারতীয় রেনেসাঁ। শ্রী রামকৃষ্ণের এবং তাঁর শিষ্য বিবেকানন্দ উভয় হয়তো রানি রাশমণির স্বপ্নের ফসল ছিলেন।
ভগিনী নিবেদিতার মতে, রাণী রাশমোণী না থাকলে থাকত না দক্ষিণেশ্বর। দক্ষিণেশ্বর না থাকলে গদাধর শ্রী রামকৃষ্ণ হয়ে উঠতেন না। শ্রী রামকৃষ্ণ ছাড়া নরেন্দ্রনাথ দত্ত বিবেকানন্দ হয়ে উঠতেন না। ভারতের বিবেকানন্দ নবজাগরণ সম্ভব হত না।
সুতরাং রানি রাশমোনি সত্যিকার অর্থেই ভারতীয় রেনেসাঁর জননী।
জগন্নাথ দেবের পুজো উপলক্ষে একবার রানী রাসমণি, তাঁর পরিবার ও দাস-দাসীদের নিয়ে জগন্নাথ ধামের উদ্দেশ্যে (পুরী) যাচ্ছিলেন | যেতে যেতে তিনি লক্ষ্য করেন যে, সেখানকার রাস্তা ভীষনই খারাপ | বাকি তীর্থ যাত্রীদের খুব কষ্ট হচ্ছে সেই পথ ধরে তীর্থের উদ্দেশ্যে যেতে | সেই দেখে রানীর মন ভীষন দুঃখে ভরে ওঠে |
পরে তিনি তাদের সুবিধার কথা চিন্তা করে সমস্ত রাস্তা সংস্কার করে দেন | কিন্তু এখানেই তিনি থেমে থাকেননি, তখনকার সময় অনুযায়ী প্রায় ৬০ হাজার টাকা ব্যয় করে তিনি জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা এই তিন বিগ্রহের জন্য হীরক খচিত তিনটি মুকুটও তৈরি করে দেন |
প্রথম ভারতীয় শিল্পপতি দ্বারকানাথ ঠাকুর 1847 সালে লন্ডন যাওয়ার জন্য রানী রাসমনির কাছে তার জমিদারির একটি অংশ বন্ধক রেখেছিলেন। এটি ছিল সুন্দরবনের একটি জলাবদ্ধ অংশ যেখানে সেই সময় সামান্য কিছু পরিবার এবং প্রধানত জলা জমি ছিল। রানী রাসমণি এই সমস্ত পরিবারগুলিকে রাজি করিয়েছিলেন যাতে তারা ঐ সমস্ত জমিতে মৎস্য চাষ ভেরি (মাছের পুকুর) গড়ে তোলে যা পরবর্তীকালে এই অঞ্চলের পরিচয় হয়ে দাঁড়ায়।
আরো পড়ুন : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনকাহিনী
রানী ও ব্রিটিশদের সংঘর্ষ
ভারতে ব্রিটিশদের সাথে রানী ও তাঁর সংঘর্ষ তার সময়ে গৃহকথার গল্প হয়ে ওঠে।
একসময় ইংরেজদের নৌ বাণিজ্য বন্ধ করে তিনি বৃটিশ সরকারকে বাধ্য করেছিলেন, যাতে তারা গঙ্গায় মাছ ধরার ওপর থেকে তাদের লাগানো টেক্স তুলে নেয়। এবং এতে তিনি সাফল্য লাভ করেছিলেন।
একবার ব্রিটিশরা ঢোল বাজিয়ে পূজার মিছিল বন্ধ করে দেয়, এবং বলে এতে নাকি শান্তি বিঘ্নিত হবে। ধর্মীয় ক্ষেত্রে এই হস্তক্ষেপে রাশমোণী ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং ঢাক ঢোল বাজিয়ে এবং চিৎকার করে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আদেশ দেওয়া। এতে ব্রিটিশ সরকার তাঁর ওপর ৪০ টাকা জরিমানা করে। এই জরিমানা আরোপ করার খবর বন্য আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়ে এবং হাজার হাজার মানুষ এই জরিমানা ক্ষমা করার জন্য ভিড় করেছিল এতে আবার ব্রিটিশ সরকার মাথা নত করতে বাদ্দ হয়।
ব্রিটিশ আমলে ভারতীয়দের দিয়ে নীলচাষ করানো হত | একবার এক ইংরেজ নীলকর সাহেব বর্তমান বাংলাদেশের মকিমপুর অঞ্চলের মানুষজনদের, জোর করে নীলচাষ করানোর জন্য ভীষন অত্যাচার করতে থাকে |
এই কথা জানতে পেরে রানী রাসমণি ছুটে যান সেখানকার মানুষদের সাহায্য করতে | পুণরায় তাঁরই হস্তক্ষেপে সবকিছু বন্ধ হয়ে যায় আগের মতো | তিনি প্রজাদের উন্নতির জন্য প্রায় এক লক্ষ টাকা খরচ করে একটা খাল খনন করে দেন যারফলে মধুমতী নদীর সঙ্গে গঙ্গার সংযোগ স্থাপন হয় |
হুগলি নদীর জেলেদের এক মহান পৃষ্ঠপোষকও ছিলেন। যখন তিনি জানতে পারেন ব্রিটিশ স্টিমশিপ হুগলি দিয়ে যাতায়াত করছে এবং যার ফলে নদীর দরিদ্র জেলেদের জীবিকা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, রানি তৎক্ষণাৎ হুগলি নদীর তীরে একটি বড় অংশ লিজ নিয়ে নেন। ঘুসুড়ি থেকে মিরপুর পর্যন্ত বিস্তৃত এই অংশে স্থানীয় জেলেদের মাছ ধরার অধিকার মঞ্জুর করেন। আজও হুগলির বেশ কয়েকটি ঘাট তার সম্পত্তির মালিকানায় রয়েছে।
দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দির স্থাপন
রাসমণির উদ্যোগে তৈরী সবচেয়ে বিখ্যাত নিদর্শন হলো দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দির, যেটা আমি লেখার শুরুতেই উল্লেখ করেছি | কিন্তু আজ যে তুমি দক্ষিণেশ্বরের কালী মন্দির দেখছ, সেটা তৈরীর পেছনেও রাসমণিকে সমাজের উচ্চবর্ণের মানুষদের কাছ থেকে অনেক কথা শুনতে হয়েছিলো |
গঙ্গার পশ্চিম দিকটি পবিত্র, এই জনপ্রিয় বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে রানী মন্দির তৈরির জন্য জমি খোঁজ করেছিলেন। যেহেতু রাসমণির পিতৃ পক্ষের পরিবার সেইসময়কার সমাজ ব্যবস্থা অনুযায়ী নিম্নবর্ণের ছিলো তাই সমস্ত ব্রাহ্মণ সমাজ দক্ষিণেশ্বরের কালী মন্দির নির্মানের কাজে প্রথমে বাঁধা সৃষ্টি করে | ব্রাহ্মণ বাড়িওয়ালা কোনও নিম্ন বর্ণের মহিলার কাছে জমি বিক্রি করবে না এবং তারা কোনও ঘাট তৈরি করতে দিবে না যা তারা ব্যবহার করবে না। অবশেষে, তাকে পূর্ব পাশের জমি দেওয়া হয়েছিল।
তার এই কাজে তিনজন পৃথক মালিক রানীকে তাদের জমি দিয়েছিলেন তাদের মধ্যে একজন মুসলমান, অন্যজন খ্রিস্টান এবং অন্য একজন হিন্দু। এই জমি গুলির মধ্যে ছিল মুসলমানদের একটি পুরাতন কবরস্থান, একটি মাজার এবং গাজী পুকুর নামে একটি জলাসয়।
এখানে জেমস হেস্টি নামে একজন ব্যক্তির একটি দ্বিতল বাড়ী ছিল যেখানে তিনি একটি কারখানা তৈরি করতে চেয়েছিলেন’ কিন্তু ইংল্যান্ডে তার অকালমৃত্যুতে তা হয়ে ওঠেনি।
হিন্দুদের ভূমিতে গঙ্গার তীরে অন্যান্য গাছের সাথে একটি বড় বট গাছ ছিল। জায়গাটির নাম পঞ্চবাট। রানী মাজার এবং জলাসয় টি কে একই রেখেছিলেন, কিন্তু কুঠি এবং পঞ্চবটি টি কিছু পরিবরতন করা হয়ে ছিল।

দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দির প্রশাসন হেস্টির কুঠি থেকে পরিচালিত হত, যেখানে রামকৃষ্ণ 1855 থেকে 1870 সাল পর্যন্ত ছিলেন।

রানী রাসমণি ছিলেন একজন দৃঢ় স্বভাবের নারী | তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি, সমসাময়িক বাকি নারীদের থেকে অনেক বেশি পরিনত ছিলো | তাঁর সবচেয়ে বড় গুন ছিলো, তিনি যেই কাজকে একবার সঠিক বলে মনে করতেন, সেই কাজকে তিনি সম্পূর্ণ করেই ছাড়তেন যতই বাঁধা বিপত্তি আসুক না কেন |
তিনি আমাদের শিখিয়েছেন, মানুষের সেবা কীভাবে ভক্তিপূর্বক করতে হয় | তিনি কোনদিনও জনসাধারণের থেকে তাঁর সেবার বিনিময়ে কিচ্ছু পাওয়ার আশা করেননি বরং তাদেরই সর্বদা উপহার হিসাবে দিয়ে গেছেন বিভিন্ন জিনিস|
তাঁর মহান কর্মই তাঁকে আজ করে তুলেছে সকলের কাছে চিরস্মরনীয় |
অবশেষে 1861 সালের 19 শে ফেব্রুয়ারী, প্রায় ৬৮ বছর বয়সে এই মহান মহিয়সী নারীর জীবনাবসান হয় |
রানী রাসমণির নামে কিছু জায়গা
- কলকাতার এসপ্ল্যানেডে একটি অ্যাভিনিউয়ের নামকরণ করা হয়েছে রানি রাশমোনি অ্যাভিনিউ, যেখানে তাঁর মূর্তিটিও রয়েছে।
- আরও, কলকাতার জানবাজারে তাঁর পৈতৃক বাড়ির কাছে রাণী রাশ্মোনি রোড নামে তাঁর নামে একটি রাস্তা নামকরণ করা হয়েছে।
- দক্ষিণেশ্বরে রাণী রাশমোনি রোড নামে একটি রাস্তাটির নামকরণ করা হয়েছে।
- ১৯৯৩ সালে রানী রাশমণির দ্বিবার্ষিক স্মরণে রাখার জন্য ভারত সরকারের ডাক বিভাগ একটি ডাকটিকিট জারি করেছিল।
- রানী রাশমণি ঘাট নামে পরিচিত একটি ফেরিঘাট পশ্চিমবঙ্গের ব্যারাকপুর এবং পশ্চিমবঙ্গের হুগলিতে (হুগলি জেলা সংশোধন বাড়ির ঠিক পরে) ফেরি সার্ভিসের জন্য নির্মিত হয়েছে।
- ভারতীয় কোস্ট গার্ডের 5 টি ফাস্ট পেট্রোল ভেসেলগুলির মধ্যে একটির নামকরণ করা হয়েছে রানি রাশমণির নামে। এটি জুন 2018 এ কমিশন করা হয়েছিল এবং এটি বিশাখাপত্তনমে (দেশীয়ভাবে হিন্দুস্তান শিপইয়ার্ড দ্বারা নির্মিত) ভিত্তিক হবে।