Skip to content
Home » শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর জীবনী

শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর জীবনী

পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতাব্দীর বৈষ্ণব ধর্ম প্রচার ও সমাজ সংস্কারের  প্রাণপুরুষ ছিলেন শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (Chaitanya Mahaprabhu) যিনি জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সব শ্রেণীর মানুষের মধ্যে ঐক্য এবং সংহতি এনেছিলেন।

শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর জীবনী

নামশ্রী চৈতন্যদেব / নিমাই (বাল্যকালে)
জন্মদিন১৮ ফেব্রুয়ারি ১৪৮৬
জন্মস্থানপশ্চিমবঙ্গ, নদীয়া জেলার
পরিবারবাবা – জগন্নাথ মিশ্র
মা – শচীদেবী
ভাই – বিশ্বরূপ
জাতীয়তাভারতীয়
ধর্মবৈষ্ণব ধর্ম
রাশিচক্র সাইনPisces
মৃত্যুদিন২৯ জুন ১৫৩৩ খ্রিস্টাব্দের (৪৮ বছর)
মৃত্যুর স্থানপুরীধামে, উড়িষ্যা, ভারত
মৃত্যুর কারণবিলীন হয়ে যান

মানুষের মনুষ্যত্ব যখন নষ্ট হতে বসে তখন বিভিন্ন দুর্নীতি ও ব্যভিচার এর হাত ধরে সমাজ জীবন কলুষিত হতে শুরু করে। বি ধর্মের প্রভাবে ধর্মের সামঞ্জস্য নষ্ট হতে শুরু করে।  আর ঠিক সেই সময় এই সংকটের হাত থেকে মানুষ ও তার ধর্মকে রক্ষা করার জন্য কোন না কোন এক মহাপুরুষের আবির্ভাব ঘটে।

এইজন্যেই এই বিশ্বে শ্রীকৃষ্ণ আবির্ভূত হয়েছিলেন। আর ঠিক এই একই কারণের জন্য আবির্ভাব হয় ঈশ্বর পুত্র যীশু এবং শেষ পয়গম্বর হযরত মুহাম্মদ এর। 

শ্রীচৈতন্যের আবির্ভাব ও ঠিক একই কারণে ঘটে।  এরা সকলেই নিজের নিজের মতন করে মানুষের মনে ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলেন।  তাদের বলা বাণী এবং তাদের দেখানো পথ অনুসরণ করে মানুষ আজও নিজেকে ধর্মের সাথে যুক্ত রাখে। 

তাদের জীবন ও শিক্ষা মানুষকে আজ ও ধর্মের প্রতি বিশ্বাস করতে সাহায্য করে। 

এই পৃথিবীতে শ্রীচৈতন্যদেবের যখন আবির্ভাব হয় তখন এদেশে সনাতন ধর্মের ওপর ঘনিয়ে এসেছে ঘোর বিপদ। একদিকে দেশে বহিরাগত মুসলমান শাসক ইসলাম ধর্মের ব্যাপ্তি ও প্রচারের চেষ্টা করছে অপরদিকে হিন্দু ধর্মের মধ্যে একতার অভাব প্রকট হয়ে উঠেছে।  উচ্চ নিচ ভেদাভেদ, গোঁড়ামি, কুসংস্কারের মত বিভিন্ন জিনিস হিন্দুধর্মকে গোড়ার থেকে দুর্বল  করছে। 

নানা সম্প্রদায়ের মধ্যে রেষারেষি প্রায়শই হিংস্র রূপ ধারণ করছে।  উচ্চ সম্প্রদায় হিন্দুরা নিম্ন ধর্মের হিন্দুদের প্রতি কটুক্তি করেছে। 

 আর ঠিক এই কারনে নিম্নবর্ণের হিন্দুরা দলে দলে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে শুরু করেছে। এরকম এক বিষময় পরিস্থিতিতেই হিন্দু ধর্মকে রক্ষা করার তথা হিন্দু  ধর্মের প্রতি মানুষের বিশ্বাস পুনঃ প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আবির্ভাব হয় শ্রীচৈতন্যদেবের। যদি সে সময় শ্রী চৈতন্য দেবের আবির্ভাব না হতো তাহলে ইসলাম ধর্মের প্রভাবে হয়তো হিন্দুধর্ম বিলুপ্ত হয়ে যেত। 

১৪৮৬ খ্রিস্টাব্দে ১৮ ফেব্রুয়ারি নবদ্বীপের মায়াপুরের এক নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ জগন্নাথ মিশ্রের ঘরে শচীদেবী র গর্ভে  জন্মগ্রহণ করেন শ্রী চৈতন্যদেব। বাল্যকালে শ্রীচৈতন্যদেবের নাম ছিল নিমাই। 

 আর এক বড় ভাই ছিলেন, তার নাম ছিল বিশ্বরূপ। লোক মাধ্যমে বিশ্বরূপের সম্পর্কে যেটুকু জানা যায় তা হল মাত্র 16 বছর বয়সে সংসার ত্যাগ করেন এবং সন্ন্যাস গ্রহণ করে  এর থেকে বেশি বিশ্বরূপ সম্পর্কে কেউ জানেন না। 

তবে বিশ্বরূপ গৃহ ত্যাগ করার পরে সবাইক নিমাই কে নিয়ে সতর্ক হয়ে ওঠেন যাতে ভবিষ্যতে নিউ দাদার পথ অনুসরণ করে গৃহ ত্যাগ না করে। 

 বিশ্বরূপে গৃহত্যাগ করার পর জগন্নাথ মিশ্র অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং কয়েক বছরের মধ্যেই তিনি দেহত্যাগ করেন। 

 বালক হিমু অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন।  একইসঙ্গে তিনি খুব দুরন্ত স্বভাবের ছিলেন,  এতটাই দুরন্ত ছিলেন যে প্রতিবেশীরা দুরন্তপনার জন্য অস্থির হয়ে উঠতেন।

অন্যদিকে গঙ্গাদাস পন্ডিতের চতুস পাটিতে নিমাই এর মতো মেধাবী ছাত্র একটিও ছিলনা।  খুব অল্প বয়সেই নিমাই প্রাচীন আচার্য ও ঋষিগণ দের শ্রেষ্ঠ কাব্যগুলি ও অনায়াসে উচ্চারণ করতে পারতেন এবং সেগুলিকে খুব সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা করতে পারতেন। তার মেধা তাকে অন্যান্য আর সাধারন মানুষের থেকে অনেকটাই পৃথক করে দিত। এর পাশাপাশি তার গভীর আত্মবিশ্বাস তাকে দাম্ভিকতা স্বীকার করে তুলত। 

কিশোর বয়সে বিবাহ যখন যখন নিমাই যখন হঠাৎই একটি টুল হলেন তখন অনেক বয়স্ক পণ্ডিতরা অবাক হয়েছিলেন।  এবং সেই দলের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন।  কিন্তু তাদের এই আশঙ্কা কে নিমাই খুব অল্পদিনের মধ্যেই ভুল প্রমাণিত করেছিলেন এবং নিজেকে শিক্ষক হিসেবে প্রমাণ করেছিলেন। 

 যৌবনে পা দেওয়া মাত্রই তার মা শচীদেবী তার বিয়ে দিয়ে দেয়।  স্ত্রী এর নাম ছিল লক্ষীদেবী।

সেই সময় ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ পণ্ডিতদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন কেশব ভারতী।  তিনি নাকি  মুখে মুখে অপূর্ব সমস্ত রচনা করতে পারতেন।  দেশ-বিদেশের বহু পণ্ডিতকে তিনি তর্ক যুদ্ধে পরাজিত করেছিলেন। 

সদ্য যুবক হওয়া নিমাই এই কেশব ভারতী কে তর্কযুদ্ধে আহ্বান করলেন। আসরে আসার পর  নিমাইয়ের  বয়স সম্পর্কে অবগত হওয়ার পর কেশব ভারতী প্রথমে নিমাই কে  ব্যঙ্গ  করেন। তারপর তিনি মুখে মুখে মা গঙ্গাকে নিবেদন করে একটি স্তব রচনা করে দেয়।  এরপর নিমাই সেসবের মধ্যে বহু ভুল এবং অসঙ্গতি বের করে কেশব ভারতীর দর্প চূর্ণ করে।  এই ঘটনার পর নিমাই পণ্ডিত হিসাবে বেশ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। 

এর কিছু সময় পর নিমাই পূর্ববঙ্গ পরিভ্রমনে যান এবং এই পরিভ্রমণ শেষে তার জীবনে এক বড় বিপর্যয় নেমে আসে।  পরিভ্রমণ থেকে ফিরে আসার পর তিনি জানতে পারেন এক বিষাক্ত সাপের কামড়ে তার  স্ত্রীর দেহ ত্যাগ ঘটেছে । 

তার স্ত্রী এর এই মৃত্যুর ঘটনা তাকে খুব বড় আঘাত দেয়। প্রথমে তিনি মানসিকভাবে বেশ ভেঙে পড়লেও পরে সামলে ওঠেন। 

প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর শচীদেবী দ্বিতীয় বিয়ে দেয়।  নিমাইয়ের দ্বিতীয় পত্নীর নাম ছিল বিষ্ণুপ্রিয়া।

এরপর নিমাই তার স্বর্গীয় পিতা পিন্ডদান করতে গয়ায় জান। সে সময় গাও খুব বড় তীর্থস্থান ছিল।  নিমাই গিয়ে একেবারে বদলে গেলেন। এতদিন তার আচার-আচরণে যে অহংকার দেখা যেত পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে গেল।  মুহূর্তের মধ্যেই তিনি যেন এক মিনিট স্নেহময় ব্যক্তিদের রূপান্তরিত হলেন। তিনি যেন আশেপাশে সকলের কষ্টকে নিজের ভাবতে শুরু করলেন। কেউ যদি তাকে তার কষ্টের কথা জিজ্ঞেস করতেন তাহলে তিনি একেবারেই চুপ হয়ে যেতেন।  তার মুখে সর্বক্ষণ ছিল কৃষ্ণ নাম। 

 এরপর নিমাই নবদ্বীপে ফিরে এলে এবং তার ছাত্রদের নিয়ে নাম সংকীর্তন করতে শুরু করলে।   কৃষ্ণ নাম নিতে নিতে অনেক সময়ই তিনি ভাবাবিষ্ট হয়ে পড়তেন। 

 তৎকালীন বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের প্রধান অদ্বৈত আচার্য নিমাই কে দেখে আপ্লুত হয়ে পড়েন।  এবং তিনি ঘোষণা করেন যে নিমাই হলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের রূপ –  যিনি মানবজাতির অশেষ কল্যান করার জন্য পৃথিবীতে এসেছেন।  

এরপর নিমাই সমাজের সমস্ত স্তরের মানুষের কাছে কৃষ্ণ নামে নিজেদের ভাসিয়ে দেওয়ার ডাক দেন।  তিনি কখনোই ব্রাহ্মণ শূদ্র ভেদাভেদ করতেন না। প্রাত্যহিক নগরকীর্তন তার জীবনের একটি অংশ হয়ে উঠেছিল । এবং এই নব কীর্তনে তার সঙ্গ দিতেন এক তরুণ সাধক যার নাম ছিল নিত্যানন্দ। 

নিত্যানন্দ ছিলেন এক শ্রেণীর ব্রাহ্মণ।  তিনি বিভিন্ন তীর্থস্থান পরিভ্রমণ করতে করতে নবদ্বীপে এসেছিলেন। এবং নবদ্বীপে আসার পর নিমাই এর সংস্পর্শে এসে তিনি তার সঙ্গেই থেকে যান। 

সেই সময় নির্বাহী আরো একজন অনুগামী ছিলেন হরিদাস।  যবন হরিদাস  ও নিত্যানন্দের ওপর ছিল প্রাত্যহিক নগর কীর্তন এর ভার। 

এই সমস্ত দেখে তৎকালীন গোঁড়া হিন্দু ও সমাজপতিরা নিমাইয়ের ক্রমবর্ধমান খ্যাতি কে নষ্ট করার জন্য উঠে পড়ে লাগলেন। এই কার্যসিদ্ধি করার জন্য তারা দুই কুখ্যাত লোককে উস্কাতে শুরু করলেন তাদের নাম হল জগাই ও মাধাই । 

জগাই মাধাই ব্রাহ্মণ ঘরের সন্তান হলেও তারা অত্যন্ত অত্যাচারী  ছিল তার সাথে সাথে তারা নেশা ভান করতো । 

এই দুই মস্তান নিমাইয়ের কীর্তনের দলের ওপর একদিন হামলা চালায়।  মাধাই একটি মাটির কলসির কানা ভেঙে ছুড়ে মারলে শেটি গিয়ে লাগে নিত্যানন্দের মাথায়।  সঙ্গে সঙ্গে অঝরে রক্ত পড়তে শুরু করে। 

এইরকম অবস্থাতেও আহত নিত্যানন্দ জগাই মাধাই কে হরি কীর্তনে যোগ দিতে অনুরোধ করেন।  এবং সেই মুহুর্তে সে গাইতে শুরু করেঃ 

 “মেরেছো কলসির কানা
 তা বলে কি প্রেম দেব না।”

সেই পরিস্থিতিতে এই গান শুনে জগাই মাধাই এর হৃদয় পরিবর্তন  হল।  এবং তারাও তখন সেই সংকীর্তনে যোগ দিলেন। এবং নাম গানে ভরে উঠলো সারা নবদ্দীপ। 

তখন বাংলার সুলতান ছিলেন প্রখর ব্যক্তিত্বের অধিকারী হোসেন শাহ।  তিনি ঋজু চরিত্রের মানুষ হলেও তার  অধীনস্থ লোকেরা তার মতন মনোভাব পালন করতেন না।  এই রকমই একজন ব্যক্তি ছিলেন সেই সময়কার নবদ্দীপ গাড়ি চাঁদগাজী।  জেনি একজন ধর্মান্ধ এবং হিন্দু বিদ্বেষী লোক ছিলেন। 

 প্রতিদিন বৈষ্ণবদের নগর কীর্তন তিনি সহ্য করতে পারছিলেন না।  তাই তিনি হুকুম জারি করলেন এই নগর সংকীর্তন চলবে না,  এবং যারা এই আদেশ অমান্য করবে চাঁদগাজী তাদের শাস্তি দেবেন। 

চাঁদ কাজির এই পড়া হুকুমে অধিকাংশ নগরবাসী ঘাবড়ে গেলেন,  কিন্তু  নিমাইয়ের কাছে এই আদেশ মূল্যহীন ছিল।  তিনি তার শীর্ষ দের বললেচল “সংকীর্তন যেমন চলছিল তেমনি চলবে”। নিমাই এর এই  কথার ফলে নগরদীপ এর পথে অন্যদিনের চেয়ে অনেক বেশি জনসমাগম হতে শুরু করলো নগর সংকীর্তন করার জন্য। কাতারে কাতারে মানুষ যোগ দিতে শুরু করলো।

নগর সংকীর্তন এই এত জনসংখ্যা দেখিয়ে চাঁদগাজী ঘাবড়ে গেল এবং অবশেষে তিনি তার নির্দেশ তুলে নিতে বাধ্য হলেন।  এরপর চাঁদ কাজী ব্যক্তিগতভাবে নিমাই এর সঙ্গে পরিচয় করে এবং মুগ্ধ হন। 

১৫১০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ শে মাঘ  গভীর রাতে নিমাই গৃহ ত্যাগ করলেন সন্ন্যাস নেওয়ার জন্য।  গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন তার মা ও স্ত্রী কেউই টের পেলেন না।  কাটোয়া এগিয়ে কেশব ভারতীর কাছে সন্ন্যাস গ্রহণ করলেন।  এবং সন্ন্যাস নেওয়ার পর তার নাম পরিবর্তিত হয় হল “শ্রীচৈতন্য”। সন্ন্যাস গ্রহণ করার সময় তার বয়স ছিল মাত্র 24 বছর। 

তারপর শ্রীচৈতন্য নীলাচলে জগন্নাথ দেবের দর্শন পাওয়ার জন্য পায়ে হেঁটে পুরী গমন করেন । সেইসময় পুরি বহু গণ্যমান্য ব্যক্তি তার অনুগামী হলেন যাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন উৎকল রাজ প্রতাপ রুদ্রের গুরুদেব মহাজ্ঞানী বাসুদেব সর্বভৌম। 

 কিছুদিন পর পর শ্রীচৈতন্য দক্ষিণ ভারতের তীর্থস্থান গুলি ভ্রমণ করার জন্য যাত্রা শুরু করে।  এই যাত্রায় তিনি যেসব স্থান পরিদর্শন করেছিলেন সেগুলি হল রামেশ্বর, কাঞ্চিপুর, ত্রিবাঙ্কুর প্রভৃতি।  এই পরিভ্রমণে হাজার হাজার মানুশ তার অনুগামী হয় । এই পরিভ্রমণে বৃন্দাবন সমেত বহু স্থান ঘুরে শ্রীচৈতন্যদেব আবার ফিরে আসেন নবদ্বীপে।  এরপর বিষ্ণুপ্রিয়া তাকে আমার সংসার জীবনে ফিরে আসার জন্য অনুরোধ করে যা শ্রীচৈতন্যদেবের পক্ষে গ্রহণ করা অসম্ভব ছিল। 

সেই সময় মাত্র 8 মাস নবদ্বীপে থাকার পর তিনি আবার ফিরে গেলেন পুরীতে। এবং তারপর আবারো বৃন্দাবন সহ নানা তীর্থস্থানে পরিভ্রমণ করেন। ১৫১৬ খ্রিস্টাব্দে পাকাপাকিভাবে তিনি চলে এলেন জগন্নাথ ধামে। 

শ্রীচৈতন্যদেবের উপস্থিতি পুরীর আকর্ষণ আরো বাড়িয়ে দিল।  সমগ্র ভারত বর্ষ থেকে দলে দলে বিভিন্ন ভক্তরা পুরীতে আসতে শুরু করলেন।  জাতি ধর্ম নির্বিশেষে। 

 একনাগাড়ে 18 বছর অবস্থান  করেছিলেন।  তারপর ১৫৩৩ খ্রিস্টাব্দের ২৯ শে জুন তার অন্তর্ধান হয়।

চৈতন্য মহাপ্রভুর বাণী

রাত্রিদিন নাম লয় খাইতে শুইতে।
তাঁহার মহিমা বেদে নাহি পারে দিতে।।

ইহা হৈতে সর্ব-সিদ্ধি হইবে সবার।
সর্বক্ষণ বল’ ইথে বিধি নাহি আর।।

সন্ধ্যা হৈলে আপনার দ্বারে সবে মিলি’।
কীর্তন করেন সবে দিয়া করতালি।।

এই মত নগরে নগরে সংকীর্তন।
করাইতে লাগিলেন শচীর নন্দন।। (চৈ: ভা: মধ্যঃ)

সর্বদা শ্রীমুখে ‘হরে কৃষ্ণ হরে হরে’।
বলিতে আনন্দ ধারা নিরবধি ঝরে।। (চৈ: ভা: আ ১/১৯৯)

সাধ্য-সাধন-তত্ত্ব যে-কিছু সকল।
হরিনাম-সংকীর্তনে মিলিবে সকল।।

কি ভোজনে, কি শয়নে, কিবা জাগরণে।
অহর্নিশি চিন্ত কৃষ্ণ বলহ বদনে।।

প্রভু বলে, – “কহিলাম এই মহামন্ত্র।
ইহা জপ’ গিয়া সবে করিয়া নির্বন্ধ।।

কলিকালে নামরূপে কৃষ্ণ অবতার।
নাম হৈতে হয় সর্বজগৎ-নিস্তার।।

গৌর যে শিখাল নাম সেই নাম গাও।
অন্য সব নাম-মাহাত্ম্য সেই নামে পাও।।

দশ-পাঁচ মিলি’ নিজে দ্বারেতে বসিয়া।
কীর্তন করহ সবে হাতে তালি দিয়া।।

অতএব গৃহে তুমি কৃষ্ণভজ গিয়া।
কুটিনাটি পরিহরি’ একান্ত হইয়া।।

‘কেবল’ শব্দে পুনরপি নিশ্চয়-করণ।
জ্ঞান-যোগ-তপ-কর্ম-আদি নিবারণ।।

শুন, মিশ্র, কলিযুগে নাহি তপ-যজ্ঞ।
যেই জন ভজে কৃষ্ণ, তাঁ’র মহাভাগ্য।।

অন্যথা যে মানে, তার নাহিক নিস্তার।
নাহি, নাহি, নাহি-তিন উক্ত ‘এব’-কার।। (চৈ: চঃ আ ১৭/২১-২৫)

অতএব কলিযুগে নামযজ্ঞ সার।
আর কোন ধর্ম কৈলে নাহি হয় পার।।

হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।

হরের্নাম হরের্নাম হরের্নামৈব কেবলম্।
কলৌ নাস্ত্যেব নাস্ত্যেব নাস্ত্যেব গতিরন্যথা।। (বৃহন্নারদীয় পুরাণ)

দার্ঢ্য লাগি ‘হরে র্নাম-উক্তি তিনবার।
জড় লোক বুঝাইতে পুনঃ ‘এব’-কার।।

এই শ্লোক নাম বলি’ লয় মহামন্ত্র।
ষোল নাম বত্রিশ-অক্ষর এই তন্ত্র।।

কলিযুগ-ধর্ম হয় নাম-সঙ্কীর্তন।
চারিযুগে চারি ধর্ম-জীবের কারণ।।

কৃষ্ণনাম-মহামন্ত্রের এই ত’ স্বভাব।
যেই জপে, তার কৃষ্ণে উপজয়ে ভাব।। (চৈ: ভা: আ ৭/৮৩)

‘হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।

সাধিতে সাধিতে যবে প্রেমাঙ্কুর হবে।
সাধ্যসাধন-তত্ত্ব জানিবা সে তবে।।